"যার রিমান্ডে থাকার কথা, তিনি 'টক-শো'তে।"
মিডিয়া হাউসগুলো বোধ হয় খুব বেশি প্রফেসন্যাল বা কমার্শিয়াল হয়ে পড়ছে। শীর্ষে ওঠার প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে প্রচলিত মিডিয়া এ্যাথিক্স ভেঙে ফেলছে। সংবাদকর্মী থেকে হয়ে যাচ্ছেন সুবিধাভোগী। বদলে যাচ্ছে বিবেক, বিবেচনাবোধ।
চলমান সময়টা যেন অশান্তির ভিরু আবরণে আবৃত্ত। কন্ঠস্বরে নেই দৃঢ়তা।
বরং রয়েছে ভিড় এড়িয়ে চলার এক ধরণের মনোবৃত্তি।
আমরা বোধ করি অনেক বেশি স্বার্থপর হয়ে পড়ছি। অনেক বেশি মমতাহীন। লোভী এবং বিলাসী। তিস্তার মত শুকিয়ে যাচ্ছে আমাদের অন্তরে বহমান মমতা নদী। আমাদের "সততা" মিশে গেছে ডাসবিনের ময়লা আবর্জনায়। কুকুরের মুখে ঠাই পেয়েছে বিবেক।
টাকা'ই কি আমাদের প্রথম ঈশ্বর?
"টাকা" পেলেই হলো। টাকার জন্য গায়ের কাপড় খোলা থেকে শুরু করে খুন-গুম, জুলুম-নির্যাতন, ক্ষমতার দাপট, সবই করতে পারি আমরা। বদলে যাই রাতারাতি। ভুলে যাই অতীত।
অবৈধ উপার্জন ছাড়া কোন ভাবেই যেন পূর্ণতা পাচ্ছেনা মানবের নিরাকার চাহিদা। সীমা-পরিসিমা নেই। টাকার কাছে বিবেকের নির্লজ্ব নতজানু যেন এখন স্বাভাবিক ঘটনা।
ধর্ম মানি, না মানি। সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করি, না করি, নিজের বিবেকের চেয়ে বড় আল্লা-খোদা নেই। প্রতিটি মানুষ যার যার বিবেকের সামনে দাড়ালে আয়নার মত পরিস্কার কি দেখতে পায়না, কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ। কোনটি মানবতা বিরোধী, কোনটি অভিশ্বাপ মিশৃত।
সেই বিবেকের কাছে কি একটিবারও প্রশ্ন করেননি র্যাব ১১-এর সিও চাকুরিচ্যুত তারেক সাঈদ মোহাম্মদ?
তিনিও তো একজন বাবা। তিনিও তো কারোর সন্তান।
কেনো রাষ্ট্রের শক্তিযন্ত্র ব্যবহার করে হবে হত্যাযজ্ঞ?
পেশাগত কারণেই কোন এক সময় "চোঁখের জল লেগে" থাকা এমন অনেক টাকার হাত বদলের নানা কাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেখার সুযোগ মিলেছে। কখনও বা নিজের মানিব্যাগে আটকে থেকেছে ঘুষ প্রদানকারী দরিদ্র অসহায় মানুষের চোঁখের জল।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবৈধ উপার্জনের খাতগুলো যে দিনেদিনে চরম অমানবিক পর্যায় পৌছে যাচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় বোধ হয় নেই খুব একটা। টাকার বিনিময়ে নিজের বিবেকের সাথে যেযত "টিনেরচশমা" পড়তে পারবেন, সে যেন অর্থসম্পদে এগিয়ে গেলেন বহুদূর।
যারা আজ নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত, তারা সবাই এক কথায় বিবেকহীন বিকারগ্রস্থ। কেবলই টাকা নামে "ঈশ্বর" এর পেছনে ছুটে চলেছে এদের মত সমাজের কিছু বিকারগ্রস্থ মানুষ।
যে টাকায় চোঁখের জল শুধু নয়, মানুষের রক্ত লেগে আছে, সেই টাকা দিয়ে কি সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া যায়?
যে টাকায় লেগে থাকে এতিম হয়ে যাওয়া ছেলে-মেয়ের বুক ফাটা কান্না, মায়ের আহাজারি, স্ত্রী'র নোনাজল,
যে টাকায় লেগে থাকে বাচাঁর আকুতি,
সে তো "টাকা" নয়, স্বজনহারা শোকাহত মানুষের অভিশ্বাপ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২